শীতলক্ষ্যায় মিললো ৬ মরদেহ, কাল ফের উদ্ধার অভিযান

স্বাস্থ্য


নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় শিশু ও নারীসহ এ পর্যন্ত ৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা। এরপর রাতের দিকে আজকের মতো তল্লাশি অভিযান স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।

রোববার (২০ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে সদর উপজেলার আল-আমিন নগর এলাকায় রূপসী-৯ নামের একটি পণ্যবাহী কার্গোর ধাক্কায় মুন্সিগঞ্জগামী এম এম আশরাফ উদ্দিন নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে৷ বেলা সাড়ে ৩টা থেকে উদ্ধারে কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, রেডক্রিসেন্ট ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা।

লঞ্চডুবির সাত ঘণ্টা পর রাতের মতো উদ্ধার অভিযান স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার গণমাধ্যমকে জানান, উদ্ধারকাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের একটা টিম সর্বদা দুর্ঘটনাস্থলে অবস্থান করবে।

তিনি আরও জানান, পানির নিচে উদ্ধার অভিযান পুনরায় আগামীকাল (সোমবার) শুরু করা হবে। এছাড়া ডুবন্ত লঞ্চ পানির ওপরে তোলা হলে তার ভেতরে তল্লাশি চালানো হবে।

রাতে উদ্ধার অভিযান স্থগিতের আগ পর্যন্ত যে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে – ৭ বছরের এক শিশু (বালিকা), ৩৫ বছর বয়সী এক নারী, আরিফা আক্তার (২৫), তার ১৮ মাসের শিশুসন্তান সাফায়েত ও জয়নাল ভূইয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম।

নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের এসপি মিনা মাহমুদা গণমাধ্যমকে বলেন, নিহতদের মধ্যে চারজনের লাশ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুইজনের লাশ রাত পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ নৌ থানায় রাখা ছিলো।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, লঞ্চটি পানির প্রায় ২৫ মিটার (প্রায় ৫৫ হাত) গভীরে ডুবে আছে এবং সেটিকে একটি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

তিনি আর জানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ও একটি বার্জের সহায়তায় লঞ্চটিকে পানির নিচ থেকে উপরে উঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

উদ্ধার অভিযান নিয়ে জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের দুটি দলের পাঁচজন ডুবুরি এখানে কাজ করছেন। তারা পানির নিচ থেকে দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেছেন। আর একজন লঞ্চ যাত্রী সাঁতার কেটে ফিরে আসার পর মারা যান।

এখনো নিখোঁজ থাকা যাত্রীদের সংখ্যা সম্পর্কে তিনি জানান লঞ্চের যাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেখানে ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন তীরে উঠতে পেরেছেন। ছয় জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এখনও ১৫ থেকে ২০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

রাত পৌনে ১০টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এসময় বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে বেঁধে পানির ওপরে তোলা হবে।

নারায়ণগঞ্জ নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা খবর পাই শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ এমভি রূপসী-৯ মুন্সীগঞ্জগামী যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। খবর পাওয়ার পর আমাদের নৌ পুলিশের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে গেছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিটও উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে।

তিনি আর জানান, রূপসী-৯ সিটি গ্রপের মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজ। জাহাজ চলাচাল সম্পর্কিত ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ভেসেলফাইন্ডারে রূপসী-৯ এর মালিক হিসাবে সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজের নাম রয়েছে।

এদিকে লঞ্চ ডুবির এই ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: ৫ জনের লাশ উদ্ধার

আর পড়ুন: মা, ওমা, আমারে রাইখা কই গেলি মা…

আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: তদন্তে তিন কমিটি

আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবি

লঞ্চডুবির ঘটনায় জরুরি যোগাযোগের জন্য বিআইডব্লিউটিএ একটি ‘হটলাইন’ খুলেছে; যারা নম্বর-১৬১১৩। এছাড়া আরও দুটি টেলিফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- +৮৮০২২২৩৩৫২৩০৬; মোবাইল- +৮৮০১৯৫৮৬৫৮২১৩।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস