সরকারি মাধ্যমিকের নতুন শিক্ষকদের পোস্টিং দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু সমন্বয় না থাকায় একটি বিদ্যালয়ে এক বিষয়ের একাধিক শিক্ষক যোগদান করেছেন। ফলে অনেকেই হয়ে পড়েছেন অতিরিক্ত শিক্ষক। এ কারণে প্রায় সাড়ে চারশো শিক্ষক যোগদানের পরও বেতন বঞ্চিত রয়েছেন।
সমস্যা সমাধানে এখনো টানাপড়েন চলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির মধ্যে। মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যোগদানের দু মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বেতন পাননি সরকারি মাধ্যমিকের সাড়ে চারশো শিক্ষক। তাদের বেতন কবে হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে ঋণ করে কষ্টে দিন পার করছেন সরকারি মাধ্যমিকের এসব শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) পরিচালক (বিদ্যালয়) বেলাল হোসাইন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে মাউশি থেকে সমন্বয় করা হয়েছিলো। কিন্তু পরে তা বাতিল করা হয়। এখন মাউশি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনাও আসেনি।
তিনি আরোও বলেন, সামনে ঈদ। এ মুহূর্তে শিক্ষকরা বেতন-বোনাস পাচ্ছেন না। যা খুবই হতাশা ও লজ্জার।
জানা যায়, সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিকের সংখ্যা ৩৪০টি। এছাড়াও রয়েছে আত্তিকৃত ৩০০ বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। যার মধ্যে ৫ হাজারের বেশি সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক রয়েছে। নতুন যোগদান করেছেন দুই হাজার শিক্ষক। ফলে অনেক শিক্ষক অতিরিক্ত হয়ে পড়ায় তাদের বেতন আটকে গেছে।
এদিকে সরেজমিনে রোববার শিক্ষা ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন শিক্ষকতা পেশায় আসা তরুণ শিক্ষকদের ভিড়। মাউশি মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে সকাল থেকেই অপেক্ষা করছেন তারা। এসময় একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ জার্নালের। তারা জানান, ঘোষণার ১৩ মাস পর নিয়োগ পেয়েছি। পর দুই মাস হলো এখনো বেতন হয়নি, সামনে ঈদ। এমন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শুধু আমাদের জন্য অপমানজনক নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য লজ্জার।
নবীন শিক্ষকরা বলেন, আমরা ২০৬৬ জন শিক্ষক গত ৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শূন্য পদের বিপরীতে যোগদান করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষক অতিরিক্ত শিক্ষক জনিত সমস্যার কারণে বেতন-ভাতাদি পাননি। ওই শিক্ষকরা টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে বেতনহীন।
অভিযোগ করে তারা বলেন, পদায়নের ক্ষেত্রে একজন নবীন শিক্ষককে নিজ জেলা, পার্শ্ববর্তী জেলা কিংবা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পদায়নের সুযোগ থাকলেও দূরের জেলায় পদায়ন দেয়া হয়েছে। এই কারণে নতুন শিক্ষদের মাঝে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে মাউশি ডিজির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৮ মার্চ সিনিয়র ও সহকারী শিক্ষক সমন্বয়ের আদলে একযোগে বদলি করা হয় ৪৭৮ শিক্ষককে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেই বদলি আদেশ বাতিল করা হয়। এরপর থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণকারী এই এই সরকারি প্রতিষ্ঠান। ফলে সরকারি মাধ্যমিকে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা।
মাধ্যমিকে কর্মরত শিক্ষকরা জানান, বিসিএস চিকিৎসকদের পোস্টিং দেয়া হয়ে থাকে উপজেলার গ্রাম অঞ্চলে। অন্যদিক এবার নতুন শিক্ষকদের পোস্টিং দেয়া হয়েছে শহর অঞ্চলে। যা শুধু নজিরবিহীন নয়, চাকরি বিধিমালার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। গোড়ায় গলদ থাকার কারণে মাধ্যমিকে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
তারা বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের মত তিন বছর বদলি করা হলে সমস্যার সমাধান হত, কিন্তু নানা অদৃশ্য কারণে এসব বদলি হয় না।
তবে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। খুব শিগগিরই নতুন শিক্ষকরা বেতন পাবেন। আমরা দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
বাংলাদেশ জার্নাল/একে/আরকে