বিদেশী গেম জোনের অনুভূতি দেশে
এক রাইড থেকে অন্য রাইডে ছুটছে শিশু আয়ানা কবীর ও ইয়াসিন ইকবাল হোসেন। অনেক রকম খেলার সুযোগ পেয়ে রীতিমতো একটার পর একটা রাইডে চড়তে থাকেন এই দুজনসহ আরও ৫ শিশু। প্রায় তিন ঘণ্টা বিভিন্ন গেমস খেলে ও রাইডে চড়েও যেনো তাদের কোন ক্লান্তি নেই। সোমবার কয়েকজন শিশুকে এমন মনের আনন্দে সময় কাটাতে দেখা যায় রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থিমপার্ক ‘টগি ফান ওয়ার্ল্ড’এ।
যেখানে বাস্তব খেলাধুলা এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মিশ্রণে অসাধারণ সব আয়োজন রয়েছে। দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ শিশু-কিশোরদের সুস্থ বিনোদনের জন্য গড়ে তুলেছে বিশাল এই থিমপার্ক।
সরেজমিনে অসাধারণ সব গেমস ও রাইড দেখে বিশিষ্ট সাংবাদিকরা জানান, ‘টগি ফান ওয়ার্ল্ড’ তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোরদের জন্য অসাধারণ সময় কাটানোর একটা মাধ্যম। খেলাধুলার সংকীর্ণ সুযোগের রাজধানী ঢাকায় ‘টগি ফান ওয়ার্ল্ড’ যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
বিদেশের গেম জোনগুলোতে যে ধরণের একটা অনুভূতি কাজ করে। তাদের যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেটা পাওয়া যাচ্ছে এখানে।
তারা বলেন, একদিকে বিনোদন অন্যদিকে যুব সমাজের মাদকাসক্তিসহ নেতিবাচক চিন্তা থেকে ফেরাতে পারে টগি ফান ওয়ার্ল্ডের এমন আয়োজন। এখানে আসলে বিনোদনে ডুবে থাকার মাধ্যমে অপরাধমূলক চিন্তা থেকে দূরে থাকবে তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টগি ফান ওয়ার্ল্ড সেজেছে নতুন সাজে। আধুনিকায়নের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন রোমাঞ্চকর সব গেমস এবং রাইড, যার সংখ্যা দেড় শতাধিক। সন্তানের সঙ্গী বাবা-মায়েদের বিনোদনের উপযোগী আয়োজনও আছে টগি ফান ওয়ার্ল্ডে, যেন পুরো পরিবার একসঙ্গে মেতে উঠতে পারে জীবনের আনন্দে।
এসব গেমস ও রাইডের সিংহভাগই ইউরোপ এবং চীন থেকে আমদানিকৃত। প্রতিটি রাইডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের।
দেখা যায়, দু’বছর বয়সের ছোট্ট এক শিশু চালাচ্ছিল গাড়ি। ঠিক মতো রাইড চালাতে পারছিলো না বলে সহযোগীতা করছিলেন টগি ফান ওয়ার্ল্ডের এক কর্মী। ইয়াসিন ইকবাল হোসেন নামে ওই শিশু বলে, আমি আরও খেলবো। এখানে অনেক খেলনা। আরেক শিশু আয়ানা কবীর বলে, এসে অনেক ভালো লেগেছে। ট্রেনে চড়েছি, ঘোড়ায় উঠেছি, নৌকা বাইচ করেছি অনেক কিছু চালিয়েছি।
জানা যায়, গত ২ মার্চ বুধবার সন্ধ্যায় বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের লেভেল ওয়ানে একটি চমকপ্রদ ফ্ল্যাশমবের মাধ্যমে করোনা পরবর্তী সময়ে টগি ফান ওয়ার্ল্ডের নতুন করে উদ্বোধন করা হয়।
বসুন্ধরা সিটির লেভেল ৮ থেকে ১৮ পর্যন্ত বিস্তৃত টগি ফান ওয়ার্ল্ডে লেজার ট্যাগ, পেইন্ট বল, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি গেমের মতো রোমাঞ্চকর সব আয়োজন রয়েছে সব বয়সীদের জন্য। রোলার কোস্টার এবং আরও অনেক রুদ্ধশ্বাস সব রাইড তো রয়েছেই।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, পুরো আয়োজনের মূল লক্ষ্য সব মানুষ যেন রোমাঞ্চ জয়ের আনন্দ মনে নিয়ে মেতে ওঠে।
টগি ফান ওয়ার্ল্ড দেখতে গিয়ে ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বসুন্ধরা সিটি আগে সবার কাছে পরিচিত ছিলো শুধু শপিং মল হিসেবে। এখানে সিনেমা হাউজ আছে, ফুডকোর্ট আছে। সব দেখে যদি কেউ গেমজোনে না আসে তবে বুঝাতে পারবে না যে এই ভবনেই এতো বড় আয়োজন রয়েছে। বিদেশের গেম জোনগুলোতে গেলে যে ধরণের একটা অনুভূতি কাজ করে। গেমজোনের আধুনিক যে সুযোগ-সুবিধাগুলো, সেটা এখানেও পাওয়া যাচ্ছে। কোন বিদেশী যদি এখানে আসে তারাও বুঝতে পারবে বাংলাদেশেও তাদের দেশের মতো আধুনিক গেমজোন করা সম্ভব। বসুন্ধরা সিটিতে বসুন্ধরা গ্রুপ এমন একটি আয়োজন করায় তাদের প্রশংসা করতে হয়।
তিনি বলেন, যেকোনো প্রজন্মের বাচ্চা থেকে বয়স্ক পর্যন্ত তারা সবাই এখানে আসলে সারাদিনের জন্য নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এটি একদিকে বিনোদন অন্যদিকে যুবক সমাজের মাদকাসক্তিসহ নেতিবাচক চিন্তা থেকে ফেরাতে পারে। এখানে এসে বিনোদনে ডুবে থাকলে অপরাধমূলক চিন্তা থেকে দূরে থাকবে আর বাচ্চারাতো এটিকে অসাধারণ উপভোগ করবে।
আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. মো. গোলাম রহমান বলেন, আমি প্রথমবারের মতো টগি ফান ওয়ার্ল্ডে এসেছি। যে আয়োজন দেখলাম এক কথায় অসাধারণ। গেমস, ভার্চুয়াল রিয়ালিটির যে ব্যাপারটি আছে এসব নিয়ে তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোররা অসাধারণ সময় কাটানোর একটা মাধ্যম, একটা অবলম্বন পেয়েছে। এমন আয়োজন বাংলাদেশের আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। আগে এমন বিনোদনের কথা চিন্তা করলেই মনে হতো যে এগুলো বিদেশের আয়োজন, দেশে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এমন সুযোগ সুবিধা ঢাকা শহরে আছে এমনটা ভাবা যায় না।
তিনি বলেন, রাজধানীতে খেলাধুলার মাঠ নেই, একটু স্বস্তি খুঁজে পাওয়ার জায়গা নেই। নেই আনন্দের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ। এমন পরিবেশে টগি ফান ওয়ার্ল্ড যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এখানে সবাই পরিবারের সঙ্গে কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে এসে ভালো সময় কাটাতে পারবে বলে আমি মনে করি। পরিবারের অভিভাবক এবং শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সবার কাছে এসব আয়োজন ভালো লাগবে এবং তারা সময়-সুযোগ থাকলেই হয়তো তারা চলে আসবে। তবে এই বিনোদনের ব্যবস্থা তাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকলে ভালো হয়। তাহলে অনেক বেশি মানুষ বৈচিত্র্যময় খেলাধুলা, ভার্চুয়াল আয়োজনের অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন তারা।
টগি ফান ওয়ার্ল্ড পরিদর্শনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আজকালের খবর পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার, রাইজিং বিডি‘র সম্পাদক এম. এম. কায়সার, শেয়ার বীজ-এর প্রকাশক ও সম্পাদক মীর মনিরুজ্জামান, সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিমন, আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শামীম সিদ্দিকি, নয়াদেশ পত্রিকার সম্পাদক আলম কিরণ, বাংলাদেশ জার্নালের যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ নবীন প্রমুখ।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ