ফেসবুকে হাসির রিঅ্যাক্ট দেয়ায় ছুরিকাঘাতে তিনজনের মৃত্যু

স্বাস্থ্য


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের স্টোরি অপশনে এক গৃহবধুর ছবিতে হাসির রিঅ্যাক্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে তিন জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও তিন জন। শনিবার রাত ১১টায় গাজীপুরের কাপাসিয়ায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- উপজেলার দক্ষিণগাও চরপাড়া এলাকার আলম হোসেনের ছেলে মো. ফারুক হোসেন (১৮), একই এলাকার বাসিন্দা আলমের ছেলে নাঈম হোসেন (১৬) ও একই গ্রামের হিরণ মিয়ার ছেলে রবিন (১৬)। আহতদের মধ্যে স্থানীয় মামুর্দী এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে ফাহিম (১৭) ও ইসমাইল হোসেনের ছেলে হৃদয়ের (১৪) নাম জানা গেছে।

এ ঘটনায় নিহত ফারুকের বাবা মো. আলম বাদি হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩ জনকে আসামি করে রোববার রাতে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।

কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ মো. আমিনুল ইসলাম জানান, কাপাসিয়া উপজেলার সম্মানিয়া ইউনিয়নের চরআলী নগরের পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর মনোহরদী এলাকার মারিয়া নামের এক গৃহবধুর ফেসবুকের স্টোরি অপশনে দেয়া এক ছবিতে নিহত নাঈম হাসির রিঅ্যাক্ট করেন। তা নিয়ে নাঈম এবং মারিয়ার সঙ্গে তার স্বামী জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদের কথা কাটাকাটি হয়।

পরে শনিবার রাতে জাহিদ ফোন দিয়ে নাঈমকে কৌশলে কাপাসিয়ার সম্মানিয়া ইউনিয়নের অল্লাহু জামে মসজিদের সামনে ডেকে পাঠায়। এসময় নাঈম ও জাহিদ সশস্ত্র লোকজন নিয়ে জড়ো হয়। সেখানে যাওয়ার পর মারিয়ার স্টোরিতে রিঅ্যক্ট করা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে নানা কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় ছুরিকাঘাতে রবিন ও নাঈম গুরুতর জখম হয়।

এসময় ফারুকসহ কয়েকজন পথচারী ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে সংঘর্ষ থামাতে গেলে তাদেরও উপরও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে আহতদের মনোহরদী হাসপাতালে নেয়ার পথে নাঈম ও ফারুক মারা যান। রবিনকে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল পাঠালে রোববার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সংঘর্ষে কমপক্ষে আরও তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ফাহিম ও হৃদয়ের নাম জানা গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে জাহিদসহ তার সঙ্গীদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

নিহত রবিনের বড় ভাই মো. মোজাম্মেল জানায়, শনিবার রাত ১১টায় উপজেলার আড়াল জিএল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিল হতে তার সাথে রবিন, নাঈম ও ফারুক বাড়িতে ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে এক ফোন পেয়ে তারা দক্ষিনগাঁও চরপাড়া এলাকার আল্লাহু মসজিদের সামনে যায়। এসময় সেখানে অবস্থান করা ১৪/১৫ জনের একটি সন্ত্রাসীদল ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে নাঈমকে মারতে উদ্যত হয়।

এসময় ই মোজাম্মেল সন্ত্রাসীদের কাছে তার ভাইকে মারার কারণ জানতে চাইলে তারা জানায়, তোমার ভাই নাঈম এক নারীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে আপত্তিকর কিছু ছবি দিয়েছে। মোজাম্মেল বিষয়টি বুঝে উঠার আগেই সন্ত্রাসীরা নাঈমের পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে পর্যায়ক্রমে ফারুক ও রবিনকে ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে সন্ত্রাসীরা।

রাতে আহতদের উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক নাঈম ও ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় রবিনের অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সকাল ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হৃদয় ও ফাহিম আহত হয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

কাপাসিয়া থানার এসআই আব্দুর রউফ জানান, ফেসবুকে রিঅ্যাক্ট করাকে কেন্দ্র করে রাতে ওই তিনজনকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ফারুক হোসেন ও নাঈম হোসেন। আহত অবস্থায় রবিনকে প্রথমে উদ্ধার করে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর মো. বাচ্চু মিয়া জানান, রোববার ভোর ৬টার দিকে রবিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস