পতন ঠেকাতে দুই শতাংশ সার্কিট ব্রেকার কাজে আসছে না

স্বাস্থ্য


গতকালের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস রোববারও পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এদিন পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক কমেছে। সূচকের সাথে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে।

এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন কমে ১ বছর আগের অবস্থানে নেমে গেছে।

ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৯০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা ১ বছর ১৩ দিন বা ২৫০ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল আজকের চেয়ে কম অর্থাৎ ২৩৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

শেয়ারের দাম আরও কমতে পারে এই ভয়ে ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধরনের বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনছেন না। আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে শতাধিক কোম্পানির ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে পুঁজিবাজার ধস দেখা দেয়। বাজারে তারল্য বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ( বিএসইসি) নানা চেষ্টা করেছে। অব্যাহত দরপতনের প্রেক্ষিতে ৯ মার্চ নতুন সার্কিট ব্রেকার দুই শতাংশ থেকে কার্যকর হয়। এর ফলে সেদিন থেকে কোনো কোম্পানির শেয়ার দর সর্বোচ্চ দুই শতাংশ কমতে পারছে।

দরপতন ঠেকানোর লক্ষ্যে প্রথমে ব্যাংক, পরে মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি, এরপর মার্চেন্ট ব্যাংক, স্টক ডিলারসহ বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত ৯, ১০ ও ৩০ মার্চের এই বৈঠক শেষে সব পক্ষই বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর অঙ্গীকার করে।

৩৩টি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলা হয়, যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশের নিচে রয়েছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যে ২ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াবে। তখন বলা হয়েছিলো এতে পুঁজিবাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়বে।

পরদিন মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে বৈঠক শেষেও বিনিয়োগ বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়।

আবার রোজার আগে বৈঠক শেষে বলা হয়, রোজায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ৩০০ কোটি টাকা আর প্রতিটি স্টক ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে ১ কোটি করে আড়াই শ কোটি টাকা লেনদেনের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করে। এ ঘোষণার পর রোজা আসার আগে শেষ কর্মদিবসে লেনদেন বেড়ে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড়ায়।

কিন্তু রমজানের প্রথম দিন থেকেই লেনদেন ক্রমেই কমতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে বসে আছেন। আজকেসহ পরপর দুদিন লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার নিচে নামল।

দুই শতাংশ সার্কিট ব্রেকার কার্যকরের দিন অর্থাৎ ৯ মার্চ দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছিলো ৭৭৩ কোটি টাকা।

এ অবস্থায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন দুই শতাংশ সার্কিট ব্রেকার পুঁজিবাজারের পতন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, দুই শতাংশ সার্কিট ব্রেকার থাকার ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে পারছেন না। ফলে বাজারে লেনদেন কমে গেছে। বাজারের পতন রোধে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেয়া এই সিদ্ধান্তটা ভুল ছিলো।

মিডউয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের পুঁজিবাজার যেহেতু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নির্ভর। তাই তাদের আচরণ বাজারের বড় বিনিয়োগকারীদেরও প্রভাবিত করে। দুই শতাংশ সার্কিট ব্রেকারের ফলে বাজারের বিনিয়োগকারীদের লেনদেন করার ক্ষমতা সীমিত করে ফেলা হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে লেনদেনে।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত না করে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিলে হয়তো আজকের পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি এবং শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিভিন্ন কারণে পুঁজিবাজারের লেনদেনে কমে গেছে। যেমন ডলারের দর বৃদ্ধি, আমদানি বৃদ্ধি এবং আসন্ন ঈদ উপলক্ষে মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

দুই শতাংশ সার্কিট ব্রেকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার যেহেতু একটি সংবেদশীল খাত, কাজেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আ, র/আকে