একদিকে ফসলডুবি অন্যদিকে ভাঙন

স্বাস্থ্য


তিস্তার চরাঞ্চল

আগাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের রাজারহাট সংলগ্ন তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের উঠতি ফসল পানির নিচে হাবুডুবু খাচ্ছে। সেইসাথে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় তিস্তাপাড়ের মানুষের বুকফাটা কান্নায় কাটছে নির্ঘুম রাত। এছাড়াও বৈরি আবহাওয়ায় প্রতি রাতে শিলাবৃষ্টি ও ঝড় হওয়ায় উঠতি ইরি-বোরো ফসল নিয়ে পুরো উপজেলার কৃষকরা দুঃচিন্তায় রয়েছেন। ব্যাপক ফসল হানির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

এদিকে কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে উপজেলায় বোরো ধান ৬ হেক্টর, পেঁয়াজ ৭ হেক্টর, পাট ৫ হেক্টর, ভুট্টা ১ হেক্টর, চিনাবাদাম ১ হেক্টর, তরমুজ, শাক-সবজি আক্রান্ত হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন।

বুধবার সরেজমিনে কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, তিস্তার নিচু চরে লাগানো চাষিদের বিভিন্ন ফসলাদি পানিতে নিমর্জ্জিত হয়ে এখন পচা গন্ধ ছড়িয়েছে। এবারে চাষিরা বাদাম, পেঁয়াজ, পটল, ঝিঙা, মরিচ, করলা, শসা, চিচিঙ্গা, কালজিরা, ধনিয়া, পালং শাকের বীজ, মিষ্টিকুমড়া, বোরোধানসহ বিভিন্ন ফসল লাগায়। চৈত্র মাসের এই অসময়ের বৃষ্টিতে নিচু চর প্লাবিত হয়ে যায়। অনেকে ধার-দেনা আর ঋণ করে সার, কীটনাশক, বীজ কিনে হাজার হাজার টাকা খরচ করে। এখন ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ায় কৃষকদের কান্নায় কাটছে নির্ঘুম রাত।

ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম গ্রামের কৃষক মজিদুল হক জানান, প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে আড়াই একর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছি। মাত্র ৭-৮ মণ পেঁয়াজ তুলতে পেরেছি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সব তলিয়ে গেছে। এখন আমার আসল টাকাই উঠল না।

একই এলাকার রামহরি গ্রামের আফতার উদ্দিন দেড় একর জমিতে বোরো ধান লাগায়। অব্যাহত বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে পঁচে গেছে। ঋণ করে ধান আবাদ করে এখন আফতার উদ্দিনের কপাল পুড়ছে।

মেদনীপুর এলাকার কৃষক ইউপি সদস্য শহিদুল বলেন, বন্যায় শুধু ফসলের ক্ষতি হয়নি, আমার দেড় একর বোরো ধানি জমি তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদীর কিনারে বাড়ি। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যাবে। এখন কোথায় যাই, খাবো কি!

ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিক জানান, আমার এলাকার কৃষক চরম ক্ষতির মুখে রয়েছে। একদিকে নদী ভাঙন আর অন্যদিকে বন্যায় কৃষক হারাচ্ছে তার বসতবাড়িসহ ফসলাদি। ঋণে জর্জরিত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সরকারকে আহ্বান জানান এ জনপ্রতিনিধি।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সম্পা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। তবে আউস মৌসুমের জন্য কৃষকদের প্রণোদনা এসেছে, এগুলো দেয়া হবে।

বৃষ্টিতে ক্ষতির কথা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রশীদ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করা শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত বেশি হলে ক্ষতির সম্ভাবনা আরও বাড়তে পারে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের আউশ মৌসুমে সরকারি প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে