আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ

স্বাস্থ্য


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। কাজেই এদেশ নিয়ে কিংবা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ কোন খেলা খেলতে পারবে না।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সমাপনী উপলক্ষ্যে শনিবার (২৬ মার্চ) রাতে চারদিনব্যাপী ‘জয় বাংলার জয়োৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে মন্ত্রিসভা কমিটি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আর কেউ কোন খেলা খেলতে পারবে না। মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ কখনো ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইনশাল্লাহ সেভাবেই এগিয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ রূপকল্প ২০২১ নির্ধারণ করে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ে তোলার যে ঘোষণা দিয়েছিল সে অনুযায়ী আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু ও সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সবচেয়ে বড় কথা আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আজ শতভাগ বিদ্যুৎ দেয়ার মাধ্যমে সকল ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালানোর মাধ্যমে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ এর বাংলাদেশ কেমন হবে সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা প্রণয়ন করে দিয়ে গেছি এবং পাশাপাশি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করেও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। একশ’ বছরের জন্য ডেল্টা প্ল্যান করে তার কিছু কিছু আমরা বাস্তবায়ন করে দিয়ে যাচ্ছি। যাতে এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুন্দর এবং উন্নত জীবন পেতে পারে।

সকলের জন্য অন্তত একটি ঘর করে দেয়ায় তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে একটি মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবেনা এবং ইনশাআল্লাহ সেটা আমরা নিশ্চিত করবো। এ পথে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি এবং এভাবেই বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট করেছি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে যাচ্ছি, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি, ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। যেন বাংলাদেশকে আর কখনো যেন কেউ অবহেলা করতে না পারে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের একটাই উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। শিক্ষায়-দীক্ষায়, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তি জ্ঞানে- সববিক থেকে যেন আমরা এগিয়ে থাকতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার ৯ মাসের মাথায় যে সংবিধান দিয়েছিলেন তাই অক্ষরে অক্ষরে মেনে তারই পদাংক অনুসরণ করে দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করেছি এবং এগিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের যাত্রা যদি আপনারা হিসেব করেন, বাংলাদেশ স্বাধীনের ৫০ বছর হলেও ২৯ বছর কোন উন্নয়ন হয় নাই। কেবল পেছনে টানা হয়েছে। অথচ জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়ে তোলার জন্য যে সাড়ে ৩ বছর কাল ক্ষমতায় ছিলেন তখনই তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে তুলে আনতে সক্ষম হন। আর ২১ বছর পর ‘৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যথন সরকার গঠন করে তখন এদেশের মানুষ কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া পায়। এরপর মূল উন্নয়নটা আসে গত ১৩ বছরে একটানা তিন মেয়াদে সরকারে থাকার কারণে।

দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই এদেশের জনগণের প্রতি তারা বারবার ভোট দিয়ে আমাদের তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আর সেজন্যই আজকে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করার সুযোগ পেয়েছি। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সুযোগ পেয়েছি। যদিও করোনার কারণে আমাদের অনুষ্ঠান সীমিত আকারে করতে হয়েছে। আমরা উদযাপনকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাস দেখি, সেই ৭১ থেকে ৭৫ সাল এবং ৭৫ এর ১৫ আগস্টের চরম আঘাত। তারপরে অন্ধকারের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে তার স্বাধীনতার চেতনা, জয় বাংলা স্লোগান, ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ, ছবি নিষিদ্ধ। ২১ বছর এভাবে বাংলাদেশের বিজয়ের ইতিহাস পদদলিত হয় এবং অন্য ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করা হয়। ইতিহাস কখনো কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আর সত্যের জয় হয়। এটা কেউ কখনো বাধা দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে না। আজ সেটাই হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের ইতিহাসের একটি সাক্ষী। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বাংলার জনগণ শেখ মুজিবকে মুক্ত করে আনার পরে এখানেই বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে। বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও তিনি দিয়েছিলেন এখানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান)। এখানেই পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এমনকি দেশ স্বাধীনের পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে দেশে ফিরে ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে দেশ গড়ার ভাষণও তিনি এখানেই দিয়েছিলেন।

জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আক্রমন শুরু করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানাসহ বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়ি। জাতির পিতা তখনই পূর্বপরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাটা প্রচার করেছিলেন। তৎকালীন ইপিআর বর্তমান বিজিবি’র হেড কোয়ার্টার থেকে সুবেদার মেজর শওকত আলী তার ৪ জন সঙ্গীসহ জাতির পিতার এই ভাষণ সারাদেশে ছড়িয়ে দেন। বিভিন্ন পুলিশ ষ্টেশনে টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে ২৫ মার্চ রাত এবং ২৬ মার্চ ভোর রাতের আগেই সারাদেশে এই বার্তাটা পৌঁছে যায়।

তিনি আরও যোগ করেন, ২৬ মার্চ এ ঘোষণার সাথে সাথেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তারা নিয়ে যায় পাকিস্তানে এবং বন্দি করে রাখে। রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেয়। তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য অর্ডার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এই সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের পথ ধরেই আমরা এগিয়ে যাব এবং শতবর্ষ উদযাপন করবে আমাদের আগামী দিনের প্রজন্ম ২০৭১ সালে। তাদের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং আমাদের বর্তমানকে আগামী প্রজন্মের জন্য উৎসর্গ করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের ওপর একটি অভিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন পরিবেশিত হয়। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই আয়োজনে এরপরই থিম সং পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

মন্ত্রিসভা কমিটির আহবায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রি আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া এবং অনুষ্ঠানের আয়োজক মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য সচিব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ বেসামরিক এবং সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বাসস

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস