যশোর শহরের পালবাড়ি তেতুঁলতলায় আনোয়ার হোসেন নামে অবসরপ্রাপ্ত একজন সেনা সদস্যকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত ভাড়াটে কিশোর গ্যাংয়ের ৬ সদস্যকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
আটককৃতরা হলো, শহরের নতুন খয়েরতলার রবিউল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২১), পুলিশ লাইন টালিখোলা এলাকার মৃত বাবু হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন (১৯), পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার ইউসুফ আলীর ছেলে আবির হোসেন (২০), মৃত জুলফিকার আলী জুয়েলের ছেলে রাফাত ইয়ামিন (২২), আবুল হোসেনের ছেলে সজীব হোসেন (২০) ও মিশনপাড়ার মুন্না ইসলামের ছেলে রুস্তম আলী (২২)।
ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেনের পালবড়ির তেঁতুলতলা মোড়ে মাহী ট্রেডার্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি ও তার বন্ধু কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা রুকনুজ্জামান পশু খাদ্যের ব্যবসার সাথে জড়িত। সদর উপজেলার নুরপুর গ্রামের গরু ছাগলের খামারি কামরুল ইসলাম খাবার চালাতে রুকনুজ্জানের কাছ থেকে কখনো নগদে অথবা বাকিতে পশু খাদ্য কিনতেন। পালবাড়ি তেঁতুলতলা এলাকার আরেকজন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামও আনোয়ার হোসেন ও রুকনুজ্জামনের কাছ থেকে পশু খাদ্য কিনতেন। এরই মধ্যে বাকিতে পশু খাদ্য নেয়ায় কামরুল ইসলামের কাছে রুকনুজ্জানের ১২ লাখ টাকা পাওনা হয়।
কিন্তু কামরুল ইসলাম টাকা পরিশোধে তালবাহনা করায় বিষয়টি রুকনুজ্জামান বন্ধু আনোয়ার হোসেনকে জানান। এরপর আনোয়ার হোসেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিয়ে কামরুল ইসলামের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকা আদায় করে দেন। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেনের ওপর কামরুল ইসলামের ক্ষোভ জন্মে। এছাড়া ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে আরেক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম আগে থেকেই আনোয়ার হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
কামরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলামের সাথে সম্পর্ক ভালো। তারা দুজনে আনোয়ার হোসেনকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করেন। এরপর তারা কিশোর গ্যাংয়ের উল্লিখিত ৬ সদস্যকে ভাড়া করেন। ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে তাদের ভাড়া করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী অগ্রিম হিসেবে কিশোর গ্যাংয়ের ৬ সদস্যকে ২০ হাজার টাকা দেন কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মাদকাসক্ত। গত ৫ এপ্রিল তারা পালবাড়ির বিআরটিসির যাত্রীছাউনিতে বসে হত্যার বিষয়ে ছক আঁটে। আনোয়ার হোসেনের দোকানের আশপাশের এলাকাও ঘুরে দেখে। গত ৮ এপ্রিল রাত পৌনে ৯টার দিকে আনোয়ার হোসেন পালবাড়ি তেঁতুলতলায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেছিলেন। এ সময় ভাড়া করা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আচমকা দোকানের ভেতর ঢুকে কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই তার পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন গুরুতর জখম আনোয়ার হোসেনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে নিয়ে তাকে যশোর সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের ভাই হায়দার হোসেন গত রোববার কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এর প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত এবং পরে বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া, পালবাড়ি ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে পৃথক অভিযান চালিয়ে উল্লিখিত ৬ জনকে আটক করেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে যশোরের এমএম কলেজের পুরনো ছাত্রাবাস থেকে হত্যার চেষ্টায় ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
ডিবি পুলিশ জানায়, আটক কিশোর গ্যাংয়ের ৬ সদস্যকে সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে